বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে বরাবরই বুক চেতিয়ে লড়াই করার মতো যে ক’জন খেলোয়াড় আছেন মুশফিকুর রহিম (মুশি) তাদের মধ্যে অন্যতম। ‘মি.ডিপেন্ডেবল’ ডাকনামটার কথা দেশবাসীকে আরেকবার মনে করিয়ে দিলেন তিনি।
ঢাকা টেস্টে একে একে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন নয় ব্যাটসম্যান। ক্রিজের এক প্রান্তের মাটি আকড়ে ধরে তখনও একা লড়াই করেছেন মুশফিকুর রহিম। তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন এগারো নাম্বার ব্যাটসম্যান এবাদত হোসেন। দুজন মিলে লাঞ্চ বিরতিতে নিয়ে গেলেন দলকে। মুশফিকের সামনে তখন আশা ডাবল সেঞ্চুরির, একই সাথে দলের রানটাও ছাড়িয়ে যেতে পারতো চারশ।
তবে লাঞ্চ বিরতি থেকে ফিরে সেসবের কিছুই আর হয়নি। এবাদত হোসেনকে স্ট্রাইক দিতে চান না বলেই ডাবলস নিতে গিয়েই বাধলো বিপত্তিটা ননস্ট্রাইক প্রান্তে রানআউট হয়ে গেলেন এবাদত।
১৭৪ রানেই অপরাজিত থেকে ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্নটা অধরাই রয়ে গেল মুশির। টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এখন মুশফিক। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে থামতে হলো ৩৬৫ রানেই।
লঙ্কানদের বিপক্ষে এই দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম দিনে মাত্র ২৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে ঐতিহাসিক ২৭২ রানের জুটি গড়ে দলকে বিপদমুক্ত করেছেন। দলও পেয়েছে বড় রান দাঁড় করানোর আশা।
দ্বিতীয় দিনের সকালের শুরুটা আবারও যখন প্রথম দিন সকালের প্রতিচ্ছবিই দেখাচ্ছিলো, তখনও উইকেট আগলে রেখে বুক চিতিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে গেলেন মুশফিক। লঙ্কান পেসারদের তোপে দল যখন বিপদের মুখে, আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাসও ফিরে গেছেন সাজঘরে, মোসাদ্দেকও ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগেই, তখনও একপ্রান্ত আগলে লড়াই চালিয়ে গেছেন মি. ডিপেন্ডেবল।
তাইজুলকে নিয়ে অষ্টম উইকেটে ৪৯ রানের জুটি গড়ে আবারও বড় রানের স্বপ্নের পালে হাওয়া লাগিয়েছেন। তাইজুল-খালেদও যখন ফিরে গেলেন শেষ উইকেটে এবাদতকে সাথে নিয়ে মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন উইকেটের উপরে। লঙ্কান বোলারদের যেন হুংকার ছেড়েই বলে যাওয়া, পারলে আমার উইকেট নিয়ে দেখাও।
শেষমেশ তার উইকেটটি আসলেও নিতে পারেননি কোনো লঙ্কান বোলার। এবাদত হোসেনের রান আউট দিয়ে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর ইনিংস।
মুশফিকের বুক চিতিয়ে লড়াই করা বীরত্বেই প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত থেমেছে ৩৬৫ রানে। ১১৫ রান নিয়ে দিন শুরু করা মুশফিক ইনিংস শেষে অপরাজিত থেকে গেছেন ১৭৫ রান আর মাঠ ছেড়েছেন একটা ডাবল সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে।