মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা সংরক্ষণে আদালতের কোনো রায় নেই—আর এ পর্যবেক্ষণ মেনে চলতে সরকারের কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই বলে জানান বিশ্লেষকেরা। দেশ টিভিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এ কথা জানান তারা।
আন্দোলনের মুখে সংসদে দাঁড়িয়ে কোটা সংস্কার না করে তা পুরোপুরি বাতিলের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে আদালতের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণ দেখিয়ে শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটা বাতিল নয় বলে সরকারের পরের সিদ্ধান্তে জানানো হয়।
তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা সংরক্ষণে আদালতের কোনো রায় নেই— আর এ পর্যবেক্ষণ মেনে চলতে সরকারের কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই।
সরকারি চাকরিতে কোটা তুলে দেয়ার মত রয়েছে উচ্চ পর্যায়ের সচিব কমিটির।
কমিটি প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাদের এ সুপারিশ নির্ভর করবে আদালতের মতামতের ভিত্তিতে।
দেশের সব অঞ্চলের জনগণের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি এবং সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭২ সালে কোটা পদ্ধতি চালু করে তৎকালীন শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার। ওই সময়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে জেলা ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখা হয়।
পরবর্তীতে ওই আদেশে সংস্কার এনে জেলা কোটা ১০ ভাগ- নারীদের জন্য ১০ ভাগ- ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ রেখে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা বহাল রাখা হয়।
এ প্রসঙ্গে সরকারের সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, অন্যান্য ২৬ শতাংশ কোটা পূরণ হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা কখনোই ৯ শতাংশের বেশি পূরণ করা যায়নি।
একদিকে সংরক্ষিত কোটা পূরণ না হওয়া আর চাকরি প্রত্যাশী মেধাবীদের সরকারি চাকরিতে সুযোগ না পাওয়া-এ নিয়ে বড় ধরনের মতভেদ তৈরি হয় সরকারের সঙ্গে চাকরি প্রত্যাশীদের। যার ফলশ্রুতিতে শুরু হয় কোটা সংস্কারের আন্দোলন।
এ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা পদ্ধতি তুলে দেয়ার ঘোষণা আসে সরকার প্রধানের মুখ থেকে।
যদিও উচ্চ আদালতের আদেশের কথা বলে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার।
আবু আলম শহীদ খান বলেন, আদালত এ বিষয়ে রায় নয়- পর্যবেক্ষণ দিয়েছে আর এ পর্যবেক্ষণ মেনে চলতে সরকারের কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই।
এদিকে, কোটা সংস্কারে গঠিত কমিটির সুপারিশেও কোটা পদ্ধতি তুলে দেয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আবু আলম শহীদ খান বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে কোটা পদ্ধতি সরকারি চাকরিতে চালু করা হয়, তা এখনো পূরন হয়নি।
বিশেষ করে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে এখনও নারীরা পিছিয়ে— প্রশাসনে নারী উপস্থিতি অনেকাংশেই কম- কোথাও শূন্য। নারী কোটা আরো বাড়ানোর পক্ষে মত তার।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা পূরণ না হলে বাকি কোটা যে মেধা থেকে পূরণ করা হয়- সে বিষয়টিও জনসমক্ষে সরকারের তুলে ধরা উচিত বলে এ বিশ্লেষক মনে করেন।