গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর সুগার মিলের জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার কোনো ইচ্ছা নেই কর্তৃপক্ষের।
ভবিষ্যতেও এই বিরোধপূর্ণ জমিতে কোনো প্রকল্প করবে না বলে জানিয়েছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ। তবে প্রকৃত মালিকদের হাতে জমি ফেরত দেয়ারও কোনো ইচ্ছা নেই শিল্প মন্ত্রণালয়ের।
আখ চাষ অব্যাহত রেখে, রংপুর সুগার মিলই চালু রাখা হবে বলে শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া জানিয়েছেন।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মূলেই ছিল রংপুর সুগার মিলের এ জমি।
সুগার মিল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ায় ওইসব জমিতে আখ বাদ দিয়ে অন্য ফসল চাষ করা হচ্ছিল।
আবার কিছু জমি ইজারাও দেয়া হয়—এঅবস্থায় এ জমি সাঁওতালদের কাছে ফেরত না দিয়ে তাতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার খবর ছড়িয়ে পরে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন সেখানকার সাঁওতাল জনগোষ্ঠী। সেখান থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদে পুলিশি শক্তি প্রয়োগ করা হলে বাধে সংঘর্ষ।
তবে গত ১০মে সেখানকার জেলা প্রশাসক বেজা কর্তৃপক্ষকে এক চিঠিতে জানান, রংপুর সুগার মিলের এই জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেখানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করা হয় এতে। জেলা প্রশাসকের এ চিঠিকে এখন ভুল বোঝাবুঝির হিসেবে দেখছে কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসকের চিঠি সত্য বা ভুল যাই হোক না কেন সেখানে এখন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে না এটা নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
কর্তৃপক্ষও তার অবস্থান পরিবর্তন করে এখন পরিকল্পনা করছে সুগার মিল আবারো চালু করার।
রংপুর সুগার মিল প্রতিষ্ঠার সময় গোবিন্দগঞ্জে প্রায় ১ হাজার সাড়ে ৮০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। যার অধিকাংশই ছিল সাঁওতালদের। নিময় অনুযায়ী সুগার মিল বন্ধ হলে ওই জমি সাঁওতালদের ফেরত দিতে হবে।
উল্লেখ, গত ৬ নভেম্বর রংপুর চিনি কলের সাহেবগঞ্জ আখের খামারের স্থাপনা উচ্ছেদের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তাদের। এতে ওই দিন একজন মারা যান। পরে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় ধানখেত থেকে। সাঁওতালদের অভিযোগ, শেষের জন ওই হামলায় আহত হয়ে মারা গেছেন। সংঘষে ৩ জন নিহত আহত হন পুলিশসহ কমপক্ষে ৩০ জন। এছাড়া সাঁওতালদের বাড়ি-ঘরেও আগুন দেয়া হয়।
*চলতি মাসের ১৪ নভেম্বর শিল্প সচিবের সংবাদ সম্মেলন :
রংপুরের গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পল্লীতে কোনো হামলা করেনি উল্টো তারাই পুলিশ এবং চিনিকলের শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে–সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেছেন শিল্প সচিব সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া।
সোমবার সকালে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
চিনিকলে জমি দখল ও দখলমুক্ত করার সরকারি চেষ্টার ফলে যে ঘটনা ঘটেছে এর পেছনে একটি স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত রয়েছে বলে জানান তিনি।
এর পেছনে ইন্দনদাতা প্রভাবশালী মহলকেও চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শিল্পসচিব দাবি করেন, একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে গত কয়েক মাসে চিনিকলের জমিতে সাঁওতালরা প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ অস্থায়ী বাড়িঘর তৈরি করে। এগুলো দখলমুক্ত করতে গেলে সাঁওতালরাই পুলিশের ওপর হামলা করে, সাঁওতালদের ইন্ধনদানকারীদেরকেও চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা।
সংবাদ সম্মেলনে শিল্প সচিব সচিব আরো বলেন, চিনি কলের জায়গার ওপর সাঁওতালরা অবৈধভাবে অস্থায়ী বসতি স্থাপন করেছিল। পুলিশ প্রশাসন তা দখলমুক্ত করেছে আর সেখানে কোনো নিরাপত্তাহীনতা নেই বলেও দাবি তার।
রংপুর চিনিকল প্রতিষ্ঠার সময় ১৯৫৪-৫৫ সালে গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জে সাঁওতাল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ১ হাজার ৮৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। শর্ত ছিল কখনো যদি চিনিকল বন্ধ ঘোষণা করা হয় তাহলে সাঁওতালদের আবারো এ জমি ফেরত দেয়া হবে। কিন্তু ক্রমাগত লোকসানের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে চিনিকল বন্ধের গুজব রটে। চিনিকল কর্তৃপক্ষ কিছু জমি্ ইজারাও দেয়। এমন পরিস্থিতিতে সাঁওতালরা জমির উত্তরাধিকার দাবি করলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে প্রশাসনের।
শিল্প সচিবের দাবি, সেখানে বর্তমানে কোনো নিরাপত্তা সংকট নেই। সাঁওতালরা নিজেরাই সহানূভীতি আদায়ের জন্য থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে।
তার দাবি, সেখানে সাঁওতালদের উপর কোনো নির্যাতন হয়নি। সাঁওতালরা এই জমির মালিক কখনোই ছিলেন না। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সংঘর্ষে কারও মৃত্যু হয়নি বলেও দাবি শিল্পমন্ত্রণালয়ের।
শিল্পসচিব বলেন, আহত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে ওই এলাকার ভূমিহীন সাঁওতালদের সরকারি উদ্যোগে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে কিন্তু চিনিকলের জমিতে কোনো অবৈধ দখলদার থাকতে পারবে না।
গত ৬ নভেম্বর রংপুর চিনি কলের সাহেবগঞ্জ আখের খামারের স্থাপনা উচ্ছেদের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তাদের। এতে ওই দিন একজন মারা যান। পরে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় ধানখেত থেকে। সাঁওতালদের অভিযোগ, শেষের জন ওই হামলায় আহত হয়ে মারা গেছেন।
আহত হন পুলিশসহ কমপক্ষে ৩০ জন। এছাড়া সাঁওতালদের বাড়ি-ঘরেও আগুন দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
হামলায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাংসদ ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাঁওতাল নেতারা। গতকাল রোববার বিকেলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের মাদারপুর গির্জার সামনে এক সমাবেশে তারা এ অভিযোগ করেন। সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী ফোরাম ও বিশিষ্ট নাগরিকদের দুটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল।