সাম্প্রতিক জঙ্গী হামলার ঘটনায় ঘুরেফিরে এসেছে বেসরকারি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। আইন-শৃংখলা বাহিনীর তদন্তে এ শিক্ষাঙ্গনটির সঙ্গে জঙ্গি গ্রুপ হিজবুত তাহরীরের তৎপরতার প্রমান মিলেছে।
বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী নিষিদ্ধ এ সংগঠনের ব্যানারে নিয়মিত প্রচারণা চালিয়েছেন সেখানে। জঙ্গি সদস্য সংগ্রহে বেছে নেয়া হয়েছিল শিক্ষাঙ্গনটিকে। এসব জঙ্গি কার্যক্রমের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন এর সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সংকট উত্তরণে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে কঠোর নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতে, সার্বিক সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার সঙ্গে জড়িতদের কয়েকজন ছিলেন বেসরকারী নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এরপরই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে কিভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে উগ্রমতবাদ প্রবেশ করেছে?
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, বিভিন্ন সময় নর্থ-সাউথ কেন্দ্রিক প্রচারণা চালিয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর। প্রথমে হিজবুতের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করে তাদের জিহাদী মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বাড়িয়ে দিতেন বন্ধুত্বের হাত।
আর যেসব শিক্ষার্থী তাদের আহ্বানে সাড়া দিতেন, তাদেরকে তৈরি করা হতো জঙ্গি আদর্শে। নামাজঘরে চলতো নিয়মিত সভা, বসুন্ধরা এলাকায় বাসা ভাড়া করে উগ্রমতবাদে দীক্ষা দেয়া হতো শিক্ষার্থীদের।
হিজবুত তাহরীরের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১২ সালে অন্য তিন শিক্ষকের সঙ্গে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি নেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে থাকা প্রকৌশলী হাসনাত রেজা করিম।
গত বছরও বিশ্ববিদ্যালয়টির লাইব্রেরি থেকে হিজবুতের বইপত্র উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তদন্ত দল। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী হিজবুতের শিকার হয়ে জড়িয়েছেন জঙ্গি কর্মকাণ্ডে, এমন নিশ্চিত তথ্যও পেয়েছে আইন-শৃংখলা বাহিনী।
সব মিলিয়ে ইমেজ সংকটে ভুগছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এ পরিস্থিতি উত্তরণে এরইমধ্যে বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসের সবখানে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। নামাজের সময় বাদে বাকী সময় বন্ধ রাখা হচ্ছে নামাজঘরটিও।
তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন গুটিকয়েক বিপথগামী শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর জন্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়ী করা যুক্তিযুক্ত নয়।
তারা বলছেন শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের একার প্রচেষ্টায় এ সংকট কাটানো সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা।
ভবিষ্যতে যেন কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন আর কোনো শিক্ষার্থীকে তাদের শিকার বানাতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।