খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে দেশের প্রায় দেড় ডজন শিল্প প্রতিষ্ঠান—এসব আবেদন যাচাই-বাছাই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বারবার এ ধরনের সুযোগ দিলে ঋণ খেলাপি হওয়াকে আরো উৎসাহিত করা হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
দেশটিভিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন তিনি।
দেশের কয়েকটি প্রভাবশালী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চাপে, সরকারের দেয়া বিশেষ সুবিধার আওতায় ১২ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. নওশাদ আলী চৌধুরী বলেন, ‘বেশ কিছু দরখাস্ত পড়েছে—দেশের পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। অর্থনীতির স্বার্থে বা দেশের স্বার্থে এটা করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেক্সিমকো গ্রুপের পক্ষে ৫ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী, জনতা এবং বেসরকারি খাতে ন্যাশনাল ও এবি ব্যাংক। এ তালিকায় আছে যমুনা, থারম্যাক্স, আবদুল মোনেম, শিকদার ও কেয়া গ্রুপের মত দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দিলে কম সুদে অনেক বেশি সময় ধরে ঋণ পরিশোধ, কম ডাউন পেমেন্টসহ ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় পাবেন উদ্যোক্তারা।
ঋণ খেলাপীদের এ ধরনের সুবিধা না দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষে অভিমত বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের।
তিনি বলেন, ‘যতো মাপ করা হবে,ততই খেলাপি হবে, তারা ব্যবসায়ীরা মনে করবে আর দিতে হবে না। ৫৭ জন শীর্ষ খেলাপি,এখনো আছেন তারা। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে সরকারের ফ্রিজের বাইরে গিয়ে বড় বড় উকিল বাংলাদেশ ব্যাংক জিতে তাদের খেলাপি হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছিল ফলে তাদের ব্যাংক ছাড়তে হয়েছিল।’
প্রভাবশালীদের অনেক চাপ থাকা সত্ত্বেও অতীতে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর হাতেই ঋণ খেলাপিদের নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে জানান তিনি।
খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক খাতে অনিয়ম-জালিয়াতি নিয়ে অর্থমন্ত্রীরও সমালোচনা করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সাবেক গভর্নর।
তিনি আরো বলেন, ‘এটা দুঃখজনক ও ন্যাকারজনক। একটি দেশের অর্থমন্ত্রীক মহোদয়কে সংসদে বলতে হয় খেলাপিদের বিরুদ্ধে আমার দলের চাপের মুখে অ্যাকশন নিতে পারছে না।’