বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নবায়ন করা অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল বিষয়ে প্রটোকল সম্প্রতি সই হয়েছে— একইসঙ্গে নতুন চুক্তি সই হয়েছে দুদেশের মধ্যে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন বিষয়ে।
তবে বাস্তবায়নের প্রস্তুতি ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআইডব্লিউটিএয়ের সাবেক সচিব। যদিও এরইমধ্যে সরকার জোরেসোরে মাঠে নেমেছে বলে দাবি নৌ সচিবের।
আর লাভ-ক্ষতির হিসেবে বাংলাদেশ তার ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হবে না বলে মনে করছেন তিনি।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌ-যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে দুদেশের মধ্যে "প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট" সই হয়। সেই থেকে ৩টি রুটে দুদেশের মধ্যে নৌ চলাচল রয়েছে। প্রটোকলের এ কাঠামোতেই বিভিন্ন সময়ে এর মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে এ বছর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিছু সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছে।
সেগুলো হলো:
প্রটোকলের মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে ৫ বছর করা।
প্রটোকল দ্বিপাক্ষিক থেকে তৃতীয় পক্ষ অন্তর্ভুক্তির সুযোগ রাখা। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারত নৌপথ ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য পরিবহন করতে পারবে। এখানে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে নেপাল ও ভুটানকে।
বাংলাদেশের প্রস্তাবে এরইমধ্যে সম্মতি দিয়েছে ভারত। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে নবায়নকৃত প্রটোকলটি সই হয়।
দুদেশের মধ্যে "কোস্টাল শিপিং অ্যাগ্রিমেন্ট" নামে একটি চুক্তিও সই হয়েছে।
এটি বাস্তবায়িত হলে ভারতের মুম্বাই বা বিশাখাপত্তম থেকে সমুদ্রপথে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে পণ্য পৌঁছতে মাত্র ৩ দিন লাগবে। এতে প্রতি টন পণ্যে খরচ পড়বে ৩০ থেকে ৩৫ ডলার। বিদ্যমান ব্যবস্থায় শ্রীলঙ্কা বা সিঙ্গাপুর হয়ে চট্টগ্রামে ভারত থেকে পণ্য আসতে সময় লাগে ২৫ থেকে ৩০ দিন, এতে প্রতি টন পণ্যের খরচ হয় প্রায় ১১০ ডলার।
প্রটোকল নবায়ন ও নতুন চুক্তি সইয়ের ফলে দুদেশের মধ্যে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুললেও বাস্তবায়নের প্রস্তুতি কতোটুকু বিশেষ করে বাংলাদেশের দিক থেকে?
বিআইডব্লিউটিএয়ের সাবেক সৈয়দ মনোয়ার হোসেন সচিব দেশ টিভিকে বলেন, প্রস্তুতি এখনো ঢের বাকি।
তিনি বলেন, ‘আরো প্রায় ২০ লক্ষ টন মালামাল এখান থেকে পরিবহন হবে এবং এটা পরিবহন করতে আরো ৩০০ জাহাজ দরকার হবে। প্রায় ১০ হাজার নতুন কর্মকর্তা কর্মচারীর দরকার হবে।’
তবে সরকার বসে নেই বলে দাবি করে এ নৌ সচিব শফিক আলম মেহেদি বলেন, ‘নব্যতা আমাদের ধরে রাখতে হবে। সেজন্য বিশ্বব্যাংকের একটা ঋণ সহায়তা প্রস্তাব আছে। আরো জনবলের দরকার হবে, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের বন্দর সমূহের যে সক্ষমতা আছে তা ব্যবহারে সদিচ্ছা ঠিক করা হবে। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে বিভিন্ন চার্জ ঠিক করা হয়েছে, সেখানে কোনো মতান্তর নেই।’
আর লাভ-ক্ষতির খতিয়ান সম্পর্কে সরকার সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রটোকল ও চুক্তি বাস্তবায়িত হলে লাভ বেশি হবে বাংলাদেশেরই।
এক্ষেত্রে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিলেন বিআইডব্লিউটিএ'র সাবেক সচিব।
তিনি আরো বলেন, ‘ট্রানজিট ফি যেটা এতোদিন প্রটোকলের মধ্যে ছিল না সেটা নেয়ার একটা প্রমোশন তৈরি করা হয়েছে। আমি মনে করি বাংলাদেশের ন্যায় সংগত অধিকার আছে এই যে লাভটা সেই লাভটা ভাগ করা।’