থমকে গেছে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের নেয়া জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ। নাগরিকদের পক্ষে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদার স্বাক্ষরে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনকে একই চিঠি যুগপৎ পৌঁছে দেয়ার পর তারা এখন জবাব পাওয়ার আশায় আছেন।
তবে এর উদ্যোক্তা ড. হুদাসহ নাগরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা আপাতত: ক্যামেরার সামনে কথা বলতে নারাজ। যদিও অন্য দু'জন নাগরিক প্রতিনিধি দেশ টিভিকে বলেছেন, এই উদ্যোগ সংলাপের জন্য নয়, সংলাপের পরিবেশ তৈরির জন্য।
তাদের মতে, হারজিতের দ্বন্দ্বে না গিয়ে সরকার ও বিরোধীদলকে সহিংস কর্মসূচি প্রত্যাহার ও দমনপীড়ণ বন্ধ করে সংলাপের ঘোষণা যুগপৎ দিতে হবে। এ ঘোষণা দুই দল একই দিনে একই সময়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।
চলমান রাজনৈতিক সংকট ও সন্ত্রাস-সহিংসতা-নাশকতার পরিস্থিতি নিয়ে গত শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। মূলত: সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন-সংশ্লিষ্ট নাগরিক ব্যক্তিত্ব এবং গণফোরাম ও নাগরিক ঐক্য-সংশ্লিষ্ট কয়েকজন রাজনীতিক এ আয়োজনে ছিলেন। ওই সভায় দীর্ঘ আলোচনা শেষে বিশিষ্ট নাগরিকদের একটি কমিটি গঠন ও রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বিএনপি চেয়ারপারসনকে জাতীয় সংলাপ বিষয়ে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এর একদিন পরই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি নেত্রীর কাছে চিঠি পৌঁছানো হয়। তবে চিঠি পাওয়ার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই বিএনপি-জামাত নেতৃত্বাধীন ২০ দল এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে অবরোধের পাশাপাশি আবারো হরতাল অব্যাহত রাখে। আর সরকারি দলের পক্ষে প্রথমে তোফায়েল আহমেদ ও পরে প্রধানমন্ত্রীও সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন।
এদিকে, নাগরিক সমাজের পক্ষে চিঠিতে স্বাক্ষরকারী সাবেক সিইসি ড. এটিএম শামসুল হুদা, ড. কামাল হোসেন, ড. আকবর আলি খান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. শাহদীন মালিক, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ তারা কেউই যোগাযোগ করা হলেও সংলাপ-উদ্যোগ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি।
তবে অন্য দুজন নাগরিক-ব্যক্তিত্বের সঙ্গে দেশ টিভির কথা হয়।
তারা জানান, নাগরিকদের এই উদ্যোগ সংলাপের জন্য নয়, সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টির একটি চেষ্টা।
তারা আরো বলেন, এই উদ্যোগে পদ্ধতিগত ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে তারপরও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমাদের ভেতর থেকে একটা উদ্যোগ নেয়া উচিত, কারণ বাইরে যারা আছে তাদের উদ্যোগটা কখনো সুখকর হয়নি। ভেতর থেকে উদ্যোগ নিয়ে যে, দূরত্বটা আছে সেটা কমিয়ে এনে একটা পরিবেশ তৈরি করা। আলাপ আলোচনার পরিবেশ তৈরি হতে পারে এবং এ আলোচনা এগুতে হলে যা করতে হবে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে হবে।’
আরেকজন বিশ্লেষক মনে করেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই দলের হারা-জেতার কিছু নেই। প্রয়োজনে যুগপৎভাবে সরকার ও বিরোধীদল অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার ও দমন-পীড়ন বন্ধ করে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারেন। তারপর সংলাপের বিষয় নিয়ে কথা হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘সমাবেশ করার যে অনুমতি সেটা যেভাবে আসতে পারে যে গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে খুবই সহজ এবং থাকা প্রয়োজন। সেটা আসতে পারে ঠিক একইভাবে যেভাবে অবরোধের কথা বলা হচ্ছে সেই অবরোধের বিষয়ে এক ধরনের ছাড় দেয়া যেতে পারে। আমার কথা হচ্ছে দুটো একসঙ্গে হতে পারে, আগে করতে হবে— অবরোধ আগে ছাড়তে হবে এমন না, তারপর আমি করবো সেটা না চিন্তা করে, সত্যকথা বলতে কি কেউ বলবে না আমি জিতেছি –কে সে হেরেছে।’
তবে তাদের উভয়েরই শংকা, সমঝোতার মাধ্যমে স্বাভাবিক পরিবেশ না আসলে, দেশে চরমপন্থা বা জঙ্গিবাদের উত্থান কিংবা নেতিবাচক কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ ঘটতে পারে। তবে সেটা হবে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি স্বরুপ।