চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার অধিকাংশ দগ্ধ রোগীর একটাই কথা রাজনীতি বুঝি না আমরা সাধারণ মানুষ। তবুও সহিংসতার শিকার হতে হয় কেন খেটে খাওয়া মানুষকেই?
দগ্ধদের আত্মচিৎকার কি রাজনীতিবিদের কানে পৌঁছায়? তারা এমন অসহ্য যন্ত্রনায় কি কাতরান কখনও? আর কত মানুষের জীবন প্রদীপ নিভে গেলে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে? বন্ধ হবে কর্মসূচির নামে মানুষ মারা? এমনটাই আকুতি দগ্ধ রোগীদের। তাদের আহ্বান সরকার কি পারে না এমন পশুদের কঠিন শাস্তি দিতে?
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গত কয়েকদিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান অবরোধে সহিংসতার শিকার হয়েছেন অধিকাংশই খেটে খাওয়া মানুষেরা। এ পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ৩৮ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি হয়েছিলেন, এর মধ্য ৫ জন মারা গেছেন আর ১৬ জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।
দগ্ধ স্বামীর বিছানার পাশে বসে শুধু চোখের জল ফেলছেন রাশেদা বেগম। তখন গোঙ্গানি শব্দ বের হচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা- সারে ৭টার দিকে সাভারের জিরানী বাজার এলাকায় দুবৃর্ত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হন অটোরিকশা চালক আব্দুর রশিদ মোল্লা। তীব্র শীতে পোড়া চামড়ার টান পড়ায় যেন আরো বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু।
বাসে থাকা প্রায় ২৫ জন যাত্রী দগ্ধ হয়েছেন। একই বাসের আরেক যাত্রী মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের ছাত্র পীথ্থীরাজ চক্রবর্তী চোখের সামনে দেখলেন অন্য যাত্রীদের দগ্ধ হতে। দগ্ধ হয়েছেন নিজেও পুড়ে গেছে দু'হাতের কব্জি পর্যন্ত।
একমাত্র ছেলেকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে পেয়ে খুশি মা ঝর্ণা চক্রবর্তী। তবে ছেলের পোড়া ভাল হবে কিনা তা নিয়ে সঙ্কিত তিনি।
দগ্ধ মানুষগুলোর মুখ, হাত-পা ও দেহের বিভিন্ন অংশ মোটা ব্যান্ডজে বাধা। স্বজনদের কেউ তাদের পথ্য দিচ্ছেন, বা কেউ পরম মমতায় গায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। দুর্ভাগা মানুষগুলোর পোড়া ক্ষত এতটাই যে, অনেকের মুখের দিকে তাকানো যায় না। অবরোধে দুবৃর্ত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে গেছে তাদের সুন্দর দেহ। অনেকের শ্বাসনালী ও খাদ্যনালী পুড়ে গেছে। তারা না পারছেন খেতে, না পারছেন ঠিকমত নিশ্বাস নিতে। ক্ষণে ক্ষণে ব্যথাতুর মুখগুলো থেকে বের হচ্ছে গোঙ্গানি।