দশম জাতীয় নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিএনপি-জামাত দূর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন ঠাকুরগাঁও সালন্দর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের পরিদর্শক জোবায়দুল হক। নাশকতা হতে পারে এমন আশঙ্কায় অনেকেই ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে তাকে নিষেধ করেছিলেন।
তবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব এড়ানো ঠিক নয় এমনটি জানিয়ে তিনি নির্বাচনের আগের দিনই ভোট কেন্দ্রে যান। নাশকতার আশঙ্কায় অনেকেই ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন থেকে সরে দাঁড়ালেও পিছু হটেননি জোবায়দুল হক। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই বিএনপি-জামাতের হামলার শিকার হন তিনি।
এ ঘটনায় ১২৪ জনকে আসামি করে মামলা করেন কনস্টেবল জাহিরুল। এ মামলায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার হলেও সবাই জামিনে আছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়দের মতে, ভোটকেন্দ্রে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের পর বিএনপি-জামাতের কর্মীরা ভোট গ্রহণের কাজে নিয়োজিত লোকজনের ওপর হামলা চালান। হামলায় জোবায়দুল হক ও ২ জন পুলিশ কনস্টেবল আহত হন। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁদের উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে কর্মরত চিকিৎসক জোবায়দুল হককে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা আনসার-ভিডিপির গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ইউনিয়ন প্রধান রেহেনা বেগম বলেন, ‘হামলার সময় স্যার ভোটের ব্যালট ও কাগজপত্র কিছুতেই হামলাকারীদের হাতে দিতে চাচ্ছিলেন না। কাগজগুলো বুকে চেপে ধরেছিলেন।’
জোবায়দুলের ছোট ভাই জিয়াউল হক বলেন, শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মা-বাবার কাছে বিদায় নিয়ে ভোটকেন্দ্রে চলে যান। রাত ১১টার দিকে খবর আসে তিনি মারা গেছেন।
তিনি আরো বলেন, জোবায়দুলের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন। ঘটনার পর থেকেই স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মেয়ে রেজওয়ানা হক দুই সন্তানের মা। আর ছেলে রকিবুল হক বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন।
সালন্দর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, ‘জোবায়দুল ভাই ভদ্র ও বিনয়ী মানুষ ছিলেন। সব সময় তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতেন। আর দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই তাঁর মৃত্যু হলো। একজন ভালো মানুষকে এভাবে মরতে হবে কখনো ভাবিনি।’
এদিকে, জোবায়দুল মারা যাবার পর প্রধানমন্ত্রী জোবায়দুলের স্ত্রীকে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দিয়েছেন আর নির্বাচন কমিশন দেয় সাড়ে ৫ লাখ টাকা।