এ মুহূর্তে আরেকটি নির্বাচন দরকার আছে কী নেই এ প্রশ্নে বিভক্ত দেশের বিশিষ্টজনেরাও। একপক্ষ মনে করছেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। গণতন্ত্রের স্বার্থে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারকেই স্বপ্রণোদিত হয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শ তাদের। বিশিষ্টজনদের কেউ কেউ আবার বলছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সর্বোত্তম না হলেও এই সরকার বৈধ। আগাম নির্বাচন নয়, নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।
দেশ টিভিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন তারা।
সাংবিধানিক নিয়ম রক্ষা করতেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং পরে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হবে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দল অর্থাৎ সরকারের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হয়েছিল। বিএনপির বয়কটের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পরপরই ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় সরকার। বিএনপি এখন দ্রুত আরেকটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাইছে।
নৈতিক দুর্বলতার কারণেই সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন হবে না-মন্তব্য টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘নৈতিক বা রাজনৈতিক ভিত্তিটা খুব দুর্বল, সেটা কিন্তু অনেক সময় তাদের আচরণে বহিপ্রকাশ ঘটে। যেমন দিনে ৫ বার বলতে হবে আমি ৫ বছর ক্ষমতায় থাকবো। এটা একটি নির্বাচিত সরকারকে বলতে হবে কেন? এই যে আস্থাহীনতা, তার জন্য বারে বারে বলছে। বিতর্কিত নির্বাচনের কারণে জনগণের যে ম্যান্ডেট, সে ম্যান্ডেটবিহীন সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকাটা গণতন্ত্রের জন্য শুভকর নয়।’
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর নির্ভর করে ক্ষমতায় দীর্ঘ সময় টিকে থাকা সম্ভব হলেও সরকার গণতান্ত্রিক দেশের জনগণের আস্থা পাবে না বলে মনে করেন আইনজীবী শাহদিন মালিক।
তিনি বলেন, ‘ঠাকুর ঘরে কে আমি কলা খায়নি ছোটবেলায় আমরা এই ছড়াটা পড়ে এসেছি, সরকারকে কিন্তু প্রতিদিনই বলতে হচ্ছে আমি কলা খায়নি অর্থাৎ নির্বাচন সঠিক হয়েছে। এভাবে পৃথিবীর কোথাও গণতান্ত্রিক সরকার চলেনি, এভাবে চলতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্তি অনেক, তাদের ওপর নির্ভর করে বহুদিন সরকার চালানো যাবে সেটা একটা গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের আস্থার সরকার হতে পারে না।’
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘সরকার কোনোমতে দেশ চালাচ্ছে বলে আমি মনে করি না। আমাদের যে সমস্ত সামাজিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো আছে সেগুল তুলনা করি, হ্যাঁ বিগত সরকারের আমলে চেয়ে এ সরকারের আমলে ভালো হচ্ছে।’
তবে ইতিহাসবিদ মেসবাহ কামাল মনে করেন পূর্ণ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেসবাহ কামাল বলেন, ‘৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে সরকার এসেছে সেটা একটা বৈধ সরকার। আর পূর্ণ মেয়াদ তার ক্ষমতায় থাকার অধিকার আছে। তবে আমাদের যে নির্বাচনী ব্যবস্থা—এই ব্যবস্থায় কিন্তু আমরা যথাযোগ্য মানুষকে নির্বাচন করতে পারছিনা।’
তবে সব নির্বাচনেই জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন তারা।