দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তি পার করছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সরকারি হিসেবে ৪০% ভোটার অংশ নিলেও বিএনপি মনে করে ৫% ভোটও পড়েনি।
দেশ বিদেশে এ নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি কোথাও। বরং মিলেছে আন্তর্জাতিক সমর্থনও।
এই এক বছরে সরকারের সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা সমালোচনার বাইরে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি তেমন কোন আন্দোলনও গড়ে তুলতে পারেনি। সব মিলিয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার অনেকটা নির্বিঘ্নেই বছরটি পার করেছে।
২০০৮ এর ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করেছিল। সেই সংসদে বিরোধীদলের আসনে ছিল বিএনপি। আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বয়কট করায় প্রার্থীর অভাবে ১৫৩টি আসনেই ভোট হয়নি। এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের ভুমিকায় রয়েছে। ওই নির্বাচনের পর অনিশ্চিত রাজনৈতিক অবস্থার মধ্য থেকেও ধীরে ধীরে পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। ।
নির্বাচনের পরপরই নবীন-প্রবীণদের সমন্বয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করে প্রশংসিত হন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।
গত এক বছরে সরকার বড় ধরণের চাপে না পড়লেও নির্বাচন পরবর্তী গণতন্ত্র হত্যার অভিযোগে বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে জামাতে ইসলামীর সহিংসতা মোকাবেলা করতে হয়েছে সরকারকে। এর রেশ না কাটতেই এপ্রিলে র্যা বের হাতে নারায়নগঞ্জে সাত খুনের ঘটনা সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দেয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে খুন, গুম অপহরণের ঘটনাও সরকারকে বিব্রত করেছে বারবার। আর প্রশ্নপত্র ফাঁস, বিমান বন্দরে একের পর এক সোনা চোরাচালান উদ্ধারের ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। সহযোগি সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে টেন্ডার ও চাঁদাবাজী আর অন্তরকলহে ঘটনা আলোচনায় ছিল বছরজুড়েই।
এ বছরেই বহুল আলোচিত পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শুরুসহ অবকাঠামো খাত হাঁটতে শুরু করেছে উন্নয়নের পথে হেটেছে দেশের অর্থনীতি। তেমন কোনো বিনিয়োগ না হলেও বেড়েছে আমদানি-রপ্তানি, মূল্যস্ফিতিও ছিল স্থিতিশিল। উন্নতি ঘটেছে বিদ্যুৎ পরিস্থিতিরও।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের মধ্যে যথাসময়ে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ ছিল প্রশংসনীয় উদ্যোগ। নির্বাচনী অঙ্গিকার অনুযায়ি ক্রসফায়ার বন্ধ করতে না পারলেও, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চুড়ান্ত পর্বে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা আইনের শাসনের প্রতি মানুষে আস্থা বেড়েছে।
একতরফা নির্বাচন নিয়ে বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক মহলে নানা সমালোচনা হলেও ধীরে ধীরে সবাই মেনে নেয় সরকারকে। সমর্থন অব্যাহত থাকে। এরই মধ্যে কমনওয়েলথ পার্লামেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরি আর ইন্টার পার্লামেন্ট ইউনিয়েনর নির্বাচনে সভাপতি বিপুল ভোটে জয়ী হন সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরি। এ দুটি জয়ের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী ১১টি আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্বাচনে বাংলাদেশ জয়ী হয়।
সব মিলিয়ে গেল বছরটি সরকারের জন্য ভালোভাবে গেলেও আগামী দিনে বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় সরকারকে অনেকটা সময় ব্যয় করতে হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।