স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার তার আইনজীবীদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা ‘একান্তে’ আলাপ করেছেন। দীর্ঘদিন কোনো আলোচনা না হওয়ায় এ সাক্ষাত বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
সোমবার (১০ অক্টোবর) বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করা হলে তার আইনজীবীরা আইনগত বিষয়ে ‘একান্তে’ কথা বলার জন্য আদালতে অনুমতি চান। আদালত অতিরিক্ত পুলিশ উপকমিশনারের (প্রসিকিউশন) কক্ষে তাদের কথা বলার অনুমতি দেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামরুল হাসান।
এ সময় উচ্চ আদালতে বাবুলের আইনজীবী শিশির মনির, আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ, সাদ্দাম হোসেনসহ কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
বাবুলের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ পরে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘উনার (বাবুল) কাছে আমরা জানতে চেয়েছি, কী ঘটেছিল? ঘটনার দিন তিনি চট্টগ্রামে ছিলেন না। উনার বক্তব্য হচ্ছে, মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার ঘটনায় উনি জড়িত নন। উনার সঙ্গে কথা বলে আমরাও সন্তুষ্ট যে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে উনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণযোগ্য নয়।’
একান্তে আলাপের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বাবুল আক্তারের সঙ্গে মামলার বিষয় নিয়ে তাদের ‘দীর্ঘদিন’ কোনো কথাবার্তা হয়নি, সে কারণেই আদালতের অনুমতি চেয়েছিলাম। আদালত তা মঞ্জুর করেন। পরে আমরা এক ঘণ্টা উনার সঙ্গে কথা বলি। আইনগত বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। মামলা পরিচালনায় আমরা এখন পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি তাতে সন্তুষ্টি জানিয়েছেন তিনি।
মামলার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে প্রশ্ন করলে গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বাবুল আক্তার অন্য আসামি মুছা ও কালুর সঙ্গে মিলে মিতু হত্যার ষড়যন্ত্র করেছেন। তাহলে মুছা ও কালু কোথায়? আমরা আদালতের পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করব।
বাবুলের আইনজীবী বলেন, শুনানির জন্য তিনটি আবেদন আমরা করেছিলাম। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, এ ঘটনায় হওয়া দ্বিতীয় মামলাটির (মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের করা) কিছু বিষয় প্রথম মামলায় (বাবুল আক্তারের করা মামলা, যে মামলায় তিনি এখন আসামি) অন্তর্ভুক্ত করতে ইতোপূর্বে আদেশ দিয়েছিল আদালত।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু একই ঘটনায় দুটি মামলা চলতে পারে না, তাই দ্বিতীয় মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। প্রথম মামলাটি চালু রাখার আদেশ দেন আদালত। আমরা উচ্চ আদালতের বিভিন্ন আদেশ ও নজির উদ্ধৃত করে শুনানিতে বলেছি, যেহেতু দ্বিতীয় মামলাটি চলছে না, তাই সে মামলার অংশ প্রথম মামলায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। আদালত এ বিষয়ে পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
বাবুল ও তার আইনজীবীদের আলাপের বিষয়ে প্রশ্ন করলে এডিসি প্রসিকিউশন মো. কামরুল হোসান বলেন, উনারা আমার কক্ষে কথা বলেছেন। আমি ছিলাম। তবে উনাদের কথোপকথন আমি শুনিনি।
এদিন স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারসহ সাতজনকে আসামি করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেয়া চার্জশিট দেন। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হালিমের আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেন।
মামলায় আসামিরা হলেন— সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার, মোতালেব মিয়া প্রকাশ ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার প্রকাশ মুছা ও খায়রুল ইসলাম প্রকাশ কালু। এদের মধ্যে মুছা ও কালু পলাতক রয়েছেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম (মিতু)। এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে পরে একপর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নেয় পিবিআই। পরে গত বছরের ১২ মে বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে নতুন করে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পরে তাকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি মিতু হত্যার ঘটনায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে পিবিআই।