দেখলেই মনে হবে যেন কোনো সমৃদ্ধ জনপদ। বিশাল রাজ্যজুড়ে মানুষের পাশাপাশি নানা ধরনের পশুপাখির মহাসমারোহ। এ যেন প্রাণহীন জনপদ। আসলে সবই পাথর।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে প্রায় ২৩ কোটি বছর আগে কোনো এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে সমুদ্রের বুক চিরে জেগে উঠে চীনের ইউননান প্রদেশের এই প্রাকৃতিক বিস্ময় 'স্টোন ফরেস্ট'।
বিশাল এলাকা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে নানা আকৃতির, নানা আকারের অসংখ্য পাথর। আকৃতিতে একেকটি পাথর দেখতে মানুষ, পশু, পাখি বা ঢাল-তলোয়ারের মত। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা প্রতিটি পাথরই যেন শিল্পীর হাতের নিপুন ছোঁয়া। হাতির পিঠে চড়ে যেন রাজা চলেছেন রাজ্য দখল করতে। সিপাহী সেনাপতিদের সঙ্গে ডাইনোসার, বাঘ, ভাল্লুক, সিংহরাও যেন তার সঙ্গী। তাদের পায়ের নিচে পড়ে কাঁদছে সাধারণ মানুষ। মন চলে যায় রূপকথার সেই অত্যাচারী রাজার রাজ্যে।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে এই পাথরের বনটির সৃষ্টি হয় প্রায় ২৭ কোটি বছর আগে সমুদ্রের তলদেশে। আর ২৩ কোটি বছর আগে কোনো এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে এটি জেগে উঠে ধরণীর বুকে।
কিন্তু চীনা লোককথা অনুসারে ওইসময়কার অসাধারণ সুন্দরী, দয়ালু আসিমাকে অত্যাচারি রাজার ছেলে বিয়ে করতে চান। কিন্তু আসিমা এ বিয়েতে রাজি ছিলেন না। তবুও রাজার ছেলে জোর করে আসীমাকে তুলে এনে বিয়ে করতে চায়। তখনই ঈশ্বর পুরো রাজ্যের ওপর অভিশাপ দেন। ব্যবহার্য সরঞ্জাম, মানুষ, পশুপাখি যে সেখানে ছিল সে অবস্থাতেই পাথর হয়ে যায়। সেই থেকে আসিমাও লেকের বুকে অক্ষয় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ন্যায় বিচারের প্রতীক হয়ে।
চীনের ভাষায় এ এলাকাটিকে বলা হয় শিলিন। শি অর্থ পাথর আর লিন অর্থ বন। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় পাথরের বন। ১৯৩১ সালে চীন এলাকাটিকে পার্ক হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে স্টোন ফরেস্ট পর্যটকদের তীর্থস্থান।