ফিচার

জীবনের সব রঙ মাখতে চান তাসনুভা

তাসনুভা আনান শিশির
তাসনুভা আনান শিশির

দেশের রূপান্তরিত নারীদের প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে টেলিভিশনে খবর পড়ে পরিচিতি পাওয়া তাসনুভা আনান শিশির তার জীবন সংগ্রামের গল্প তুলে ধরেছেন নিজের ফেসবুক পেজে। বর্তমানে নিউইয়র্কে বসবাসরত এই রূপান্তরিত নারী ক্যারিয়ারের শুরুতে মঞ্চে কীভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন তা তুলে ধরেছেন।

নিজের জীবনকে ‘রংমহল’ হিসেবে বর্ণনা করে তাসনুভা মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আমার জীবনটা কিন্তু মন্দ না। কখনো গাঢ় লাল রক্তের মতো না। কিছুটা হালকা। মনে হয় বুঝি আর পারছি না। ঠিক তারপরই কোথা থেকে নীলেরা আসে।’

‘কোথা থেকে সাথে করে নিয়ে আসে আসমানিদের। কোনোটা আমি কণ্ঠে ধারণ করি, কোনোটা আবার জড়িয়ে নেই আলিঙ্গনে। কিছুক্ষণ পরেই কদমফুলের আসার সময় হয়, কিন্তু সে আর আসে কই, আসে শ্রাবণ। আমি শুধুই ভিজে যাই। ‘

তাসনুভার বাড়ি বাগেরহাটে। ২০১৪ সাল থেকে তিনি ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। ট্রান্সজেন্ডার, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কর্মরত বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামের একটি এনজিওতে প্রকল্প কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। এর আগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেও কাজ করেছেন তিনি।

সংগ্রামী এই নারী লিখেছেন, ‘স্মৃতিরা বড়ই বেরসিক। কাজকর্মের ফাঁকে ফাঁকে সুকৌশলে এসে ভিজিয়ে দিয়ে যায়। একজন মঞ্চ অভিনয় শিল্পী হিসেবে যেদিন প্রথম মঞ্চে দাঁড়াই, নিজের কোনো এক সহযোদ্ধার কাছেই খুব বাজেভাবে বুলিংয়ের শিকার হয়েছিলাম। ভালো অভিনয়, ভালো প্রোডাকশন ম্যানেজার বা ভালো সহশিল্পী হওয়ার জন্য যতখানি শ্রম দেয়ার দরকার নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, হাজার বার থেমে গেছি, কখনো আঘাত এমনভাবে এসেছে মনে হয়েছে, কোমর তুলে বুঝি আর দাঁড়াতে পারবো না। লজ্জায়, অপমানে, কান্নায়, অভিমানে দল ছেড়েছি। এ দল থেকে সে দল, কিন্তু কখনোই মনে হয়নি থিয়েটার ছেড়ে দেই। কে যেন বলেছিল লেগে থাকতে, কিছু একটা হবে৷ দম ছাড়িনি। তাই লেগেই ছিলাম, এখনো চেষ্টা করছি। কী হবে জানি না। ‘

তাসনুভা আনান

তাসনুভা আনান

‘শুরুর দিকের কথা। বাবার শরীর খারাপ, সেই সাথে নিজের শরীর ও মনের আমূল পরিবর্তন। দুই বছরের গ্যাপের পর ফিরে এলাম আবার মঞ্চে। কিন্তু জানেন, শত শত চেনা চোখ, শুধু আমাকে দেখছে নতুনভাবে, কেউ বিস্ময় নিয়ে, কেউ কৌতূহলে। কেউ কেউ আবার ট্রল করেছে হাজার বার৷ পাশের বাড়ির মিনিদের বিদেশি কুকুর যেমন, আমাকে দেখলে তেড়ে আসতো, আমি ভয়ে এক দৌড়ে পালাতাম। সেরকম বুলিং থেকে বাঁচতেও আমি এক দৌড়ে পালাতাম।’

‘কিন্তু কোথায় আর যাবো। যে মানুষের শক্তি, সাহস বা যোগ্যতা থাকত না আমাকে ছোবার সে-ও একবার চোখ দিয়ে আমাকে ছুঁয়ে দিয়ে গেছে। বারংবার আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি৷ নতুন করে ভেবেছি। নতুন করে নিজেকে গড়েছি। যেখানে সুযোগ পেয়েছি সেখানেই চেষ্টা করেছি টিকে থাকতে। এখনো করছি।’

‘হারতে হারতে যখন আমি ক্লান্ত। আপনারা কেউ না জানলেও ওই সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির প্রতিটা সিঁড়ি, রিহার্সাল রুমের আয়না, দরজা, জানালার শিক, কালো পর্দা, লিফট, নন্দনমঞ্চ, স্টুডিও থিয়েটার হল, এক্সপেরিমেন্টাল, চিত্রশালা, মূল হল-এমন কোনো রুম নাই যেখানে আমার চোখের দু্ফোঁটা জল নেই।’

‘তখন এত কান্না কোথায় পেতাম, ভাবতেই অবাক হই। এখন শত চেষ্টা করেও একটু চিৎকার করে কান্না করতে পারি না। কাউকে অভিশাপ দিতে পারি না। বুঝলাম একটু পরিপক্ব হয়েছি। ‘

‘এত কথা কেনো লিখলাম জানি না, তবে লিখতে লিখতে অনেক ছোটবড় ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে, সেখানে আজ ফোকাস না-ই করি।’

‘আপনাদের চোখের সামনেই আমি দিনের পর দিন অপমানিত হয়েছি৷ বুলিংয়ের শিকার হয়েছি। আপনাদের কাছে কাজ চাইতে গেছি, দিনের পর দিন যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও আমাকে কাজ তো দেন-ই-নি বরং মুখের ওপর যখন পেরেছেন অপমান করতে, করেছেন, না পারলে আড়ালে হেসেছেন। ’

‘হাজার বছর ধরে হিজরা/ ট্রান্স/ থার্ড জেন্ডার যে যেভাবেই চিনেন না কেনো এই কমিউনিটির মানুষগুলোকে নিয়ে যেভাবে উপস্থাপন করেন, করেছেন বা করবেন সেটা দিয়ে একটা বিশাল কমিউনিটিকে কতটা হেয় করছেন, কতটা অপমানিত করছেন আপনারা কোনোদিন কি সেটা বুঝতে বা জানতে চেয়েছেন? নিছক কিছু ফালতু বিনোদনের উদ্দেশ্যে আমাদের জীবনটাকে আমজনতার কাছে করে দিয়েছেন সস্তা।’

তাসনুভা আরও লেখেন, ‘আমার নিজের জীবনের ঘটনাগুলো আপনারা সবই জানেন, আপনাদের চোখের সামনেই আমি একটু একটু করে আমার এক একটা দিন নষ্ট করে বড় হয়েছি। আর না। একটা দিন তো দূরে, একটা সেকেন্ডও না। জীবনটার কোনা কোনা দেখতে চাই। প্রতিটা রং গায়ে মাখতে চাই। শুধু আপনার/তোর/তোমার দেয়া লাল, নীল, সাদা কালো রঙের বাইরের রংগুলোও দেখতে চাই। না দেখে এত বড় রংমহলের কি করে এত বড় অপমান করি বলুন তো?’

দেশটিভি/এএম
দেশ-বিদেশের সকল তাৎক্ষণিক সংবাদ, দেশ টিভির জনপ্রিয় সব নাটক ও অনুষ্ঠান দেখতে, সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল:

এছাড়াও রয়েছে

বাংলাদেশ ব্যাংকে বাবা-ছেলের প্রথম অফিস, ছবি ভাইরাল

বেশ্যা ও বিদুষীর গল্প: বাংলাদেশি সমাজ বদলের ডাক

বিয়ে নিয়ে যা বললেন সেই মিলন

ম্যাকডোনাল্ডসের আইসক্রিম মেশিন কেন নষ্ট থাকে?

উত্তরপত্রে ‘মাসুদ ভালো হয়ে যাও’

হাত হারিয়েও সফল পৌলোমী

বাবা দিবস আজ

দেশ টিভিতে বিশাল নিয়োগ

সর্বশেষ খবর

স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার নারী দিবস উদযাপন

শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করলেন মোস্তাফিজুর রহমান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইউল্যাব’ শিক্ষার্থীদের ফটোওয়াক

ভান্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়ায় পৌর প্রশাসক নিয়োগ