অমৃত মলঙ্গী: ম্যাকডোনাল্ডসের বিখ্যাত ‘ম্যাকফ্লারি’ আইসক্রিম স্বাদে অনন্য, চাহিদা আকাশচুম্বী। কিন্তু আপনি চাইলেই যেকোনো আউটলেটে গিয়ে এই মার্কিন ফাস্ট ফুড চেইন কোম্পানির আইসক্রিম খেতে পারবেন না। ‘মেশিন নষ্ট’ অজুহাত শুনে অধিকাংশ দোকান থেকে আপনাকে ফিরে আসতে হবে!
নিউইয়র্ক শহরের কেউ যখন এই লেখা পড়ছেন, তখন শহরটির ২৫.৫৩ শতাংশ আউটলেটে ম্যাকডোনাল্ডসের আইসক্রিম মেশিন নষ্ট। কিন্তু কেন?
এই রহস্য উদঘাটনে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ভিডিও বানিয়ে মার্কিন মুলুকে তোলপাড় ফেলে দেন ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাস করা নামী সাংবাদিক এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর জনি হ্যারিস। হ্যারিস নিউইয়র্ক টাইমসের মতো গণমাধ্যমে প্রযোজনা করেছেন। পাশাপাশি চলচিত্র নির্মাণ করেন। ইদানীং টিকটক, ইউটিউব এবং ফেসবুকে সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় ‘বিশ্লেষণী ও দর্শনধর্মী’ কনটেন্ট তৈরি করে জনপ্রিয় হয়েছেন।
হ্যারিসের ভিডিওর তথ্য উদ্ধৃত করে ব্রিটেনের ট্যাবলয়েড পত্রিকা দ্য সানে ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, মেশিন প্রস্তুতকারী টেইলর কোম্পানির কারসাজির কারণে ম্যাকডোনাল্ডসের আউটলেটগুলোর মেশিন প্রায়ই অকেজো হয়ে থাকে।

জনি হ্যারিস
হ্যারিস অনেক অনুসন্ধান করে জানতে পারেন, টেইলরের সঙ্গে ম্যাকডোনাল্ডসের এমন একটা চুক্তি আছে, যার কারণে তারা অন্য কোনো কোম্পানির মেশিন ব্যবহার করতে পারে না। বছরের পর বছর এই মেশিনই তাদের ব্যবহার করতে হচ্ছে। আর এই সুযোগটাই নেয় টেইলর।
টেইলরের ওয়ারেন্টি শর্তে বলা আছে, মেশিন অকেজো হলে তাদের ‘সার্ভিসম্যান’ দিয়েই ঠিক করতে হবে। অন্য কোনো কোম্পানিকে ডাকা যাবে না।
টেইলর কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বার্ষিক লভ্যাংশ বিশ্লেষণ করে হ্যারিস দেখতে পান, বছরে তাদের আয়ের ২৫ শতাংশই আসে এই সার্ভিস প্রক্রিয়া থেকে!
অর্থাৎ টেইলর মাসের পর মাস জটিল এই সার্ভিসের নামে ম্যাকডোনাল্ডস থেকে লাখ লাখ ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে।
হ্যারিস তার ভিডিওতে জানান, টেইলরের মেশিন প্রতিদিন ‘অটোমেটেড’ বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরিষ্কার হয়। এতে চার ঘণ্টা সময় লাগে। পরিষ্কারের সময় কোনো ময়লা থেকে গেলে আবার প্রথম থেকে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। তখন আবার চার ঘণ্টা লাগে।
মেশিনটি ব্যয়বহুল হওয়ায় ম্যাকডোনাল্ডসের অধিকাংশ আউটলেটে একটিই রাখা হয়। এতে অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে মেশিন বেশি গরম হয়ে যায়। তখন অকেজো হয়ে পড়ে।

ম্যাকডোনাল্ডসের আইসক্রিম
হ্যারিসের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে ফেডারেল ট্রেড কমিশন। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে গ্রাহকের অধিকার ক্ষুণ্ণের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়।
কিন্তু কোম্পানিটি অভিযোগ অস্বীকার করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কাছে ওই সময় দাবি করে, ‘আমরা গ্রাহকের কথা চিন্তা করে সব সময় সর্বোত্তম সেবা দেয়ার চেষ্টা করি। এই মেশিন জটিল প্রক্রিয়ায় বানানো হয়েছে। ব্যবহারবিধিও জটিল। তাই ঠিকঠাক করার কাজটি আমরা নিজেরাই করে থাকি।’
যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এই ধরনের অভিযোগ সব সময় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। কোনো দোকানে গিয়ে কোনো গ্রাহক চাহিদামতো পণ্য না পেলেও ওই ব্যবসায়ীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়।
ম্যাকডোনাল্ডসের এই আইসক্রিম নিয়ে ২০২১ সালে এতটাই আলোচনা হয় যে, গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যঙ্গাত্মক লেখালেখির বন্যা বয়ে যায়। কোন আউটলেটের মেশিন ভাঙা, কোন আউটলেটের মেশিন ঠিক আছে, সেটি ট্র্যাক করতে এক যুবক ম্যাকব্রোকেন নামে একটি ওয়েবসাইটই খুলে ফেলেন! আইসক্রিম-প্রেমীরা সেই ওয়েবসাইটে দেখে আগে থেকে জেনে যান কোথায় গেলে খাবারটি পাওয়া যাবে। কোথায় পাওয়া যাবে না।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় ম্যাকব্রোকেন ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেছে, কোম্পানিটির ১০.৪ শতাংশ আউটলেটে আইসক্রিম মেশিন নষ্ট।
শুধু নিউইয়র্ক শহরের হিসাব করে দেখা গেছে, ২৫.৫৩ শতাংশ আউটলেটের মেশিন কাজ করছে না।