ফিচার

কেন হারাতে বসেছে শত বছরের ঐতিহ্য হালখাতা

হালখাতা। ছবি: সংগৃহীত।
হালখাতা। ছবি: সংগৃহীত।

মোঘল সম্রাট আকবর বৈশাখকে প্রথম মাস ধরে বাংলা বছর গণনা চালু করার পর থেকেই পহেলা বৈশাখের প্রচলন শুরু হয়। তবে ব্যবসায়ীদের কাছে দিনটি বড় আশির্বাদ। এর প্রধান কারণ হালখাতা। বিগত বছরের সব দেনা-পাওনা মিটিয়ে নতুন বছরের জন্য নতুন খাতা খোলেন তারা। আনন্দ-আয়োজন আর আপ্যায়নের মাধ্যমে তা খোলা হয়ে থাকে। পুরান ঢাকার সদরঘাট, তাঁতী বাজার, শাঁখারি বাজারের জুয়েলার্স ও অলংকার তৈরির কারখানা; শ্যাম বাজার, চক বাজার ও ইসলামপুরের কাপড়ের দোকানগুলোতে প্রতিবছরই হালখাতা হয়। হয় দেশের অন্য জেলাতেও। তবে ইংরেজী মাসের গুরুত্ব সব জায়গায় বেড়ে যাওয়া হালখাতার প্রচলন আর আগের মতো নেই। তাই বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি আগের মতো রাঙ্গাতে পারে না পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের। তবে অল্প পরিসরে এখনো হালখাতা করেন পুরান ঢাকার কিছু ব্যবসায়ী।

বিগত দু’বছর করোনা মহামারির কারণে ঠিকমতো হালখাতার অনুষ্ঠান করতে পারেননি পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা। এবার তাই বৈশাখ ও হালখাতার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অন্যরকম আমেজ ও উত্তেজনা কাজ করছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।

ইতিহাসের পাতায় হালখাতা সম্পর্কে যে বিবরণ পাওয়া যায় তা হলো, লাঙলের ব্যবহার শেখার পর মানুষ স্থায়ী বসবাস শুরু করে। কৃষিজাত দ্রব্য বিনিময়ের প্রথা শুরু হয় তখন। এই লাঙল বা হালের মাধ্যমে চাষের ফলে উৎপন্ন দ্রব্যসামগ্রী বিনিময়ের হিসাব একটি খাতায় লিখে রাখা হতো। সেই খাতার নাম ছিল হালখাতা। হাল শব্দটি সংস্কৃত ও ফরাসি—দুটি থেকেই এসেছে। সংস্কৃতিতে হল বা হালের অর্থ লাঙল এবং ফরাসিতে হাল শব্দের অর্থ নতুন। সময়কাল বিশেষে দুটি অর্থই হালখাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

মোঘল আমলে হালখাতার অনুকরণে জমিদারদের কাছ থেকে বকেয়া রাজস্ব আদায়ের জন্য ‘পুণ্যাহ’ চালু করেন সম্রাট আকবর। একই নিয়ম মেনে বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁন পুণ্যাহ প্রচলন করেন। এ সময় খাজনা বা রাজস্ব পরিশোধ করতেন সবাই। প্রাচীনকালের হালখাতা নবাবী আমলে নাম পাল্টে হয় পুণ্যাহ। কিন্তু পরে হালখাতা নামটিই প্রচলিত হয়ে পড়ে।

শাঁখারি বাজারের অলংকার ব্যবসায়ী কালিপদ বলেন, ‘পুরাতন হিসাব চুকিয়ে নতুন হিসাব শুরুর দিন এটি আমাদের। হালখাতা মানে যে শুধু পুরনো হিসাব চুকানো তা নয়, এটি আমাদের কাছে একটি উৎসবও। করোনার কারণে গত দু’বছর হালখাতা বন্ধ ছিল। তবে হালখাতা অনুষ্ঠানের সেই আয়োজন বেশ কিছু বছর হলো আগের মতো আর নেই। পূর্বের হালখাতার এক দুই সপ্তাহ আগেই দোকান পাট সাজানো হতো। আগের মতো এখন আর অতো জমজাটভাবে অনুষ্ঠান হয় না।’

ইসলামপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী কাওসার বলেন, ‘১লা বৈশাখ এলেই আমরা নতুন টালি খাতা খুলে পুরনো হিসাব ক্লোজ করি। এই প্রথা যুগ যুগ ধরে চলছে। তবে এখন ব্যবসায়ীরা সবাই ইংরেজি মাসের ওপর ভিত্তি করে আয়-ব্যয় করেন। তাই ধীরে ধীরে পহেলা বৈশাখে হালখাতা উৎসব বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন আমাদের মতো করে ক্রেতাদের কাছ থেকে বাকিতে দেওয়া টাকা আদায় করে থাকি।’

শ্যাম বাজারের আরেক ভুসা মালের ব্যবসায়ী সালমান বলেন, ‘এখন বাংলা নববর্ষের জন্য অপেক্ষা না করে বছরের মাঝামাঝি সময়ে অনেকে হালখাত করে ফেলেন। সে জন্য অনেকের মাঝেই এ নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই।’

উল্লেখ্য, পুরান ঢাকায় এখনও হালখাতার যে ঐতিহ্য তা ধরে রেখেছে শাঁখারি বাজারের ব্যবসায়ীরা। পূর্বের রীতিনীতি মেনে এখানও এখানকার ব্যবসায়ীরা পহেলা বৈশাখে তাদের পুরনো খাতার পুরনো হিসাবে চুকিয়ে নতুন করে বেচাকেনা শুরু করেন।

দেশটিভি/এমএস
দেশ-বিদেশের সকল তাৎক্ষণিক সংবাদ, দেশ টিভির জনপ্রিয় সব নাটক ও অনুষ্ঠান দেখতে, সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল:

এছাড়াও রয়েছে

বাংলাদেশ ব্যাংকে বাবা-ছেলের প্রথম অফিস, ছবি ভাইরাল

বেশ্যা ও বিদুষীর গল্প: বাংলাদেশি সমাজ বদলের ডাক

জীবনের সব রঙ মাখতে চান তাসনুভা

বিয়ে নিয়ে যা বললেন সেই মিলন

ম্যাকডোনাল্ডসের আইসক্রিম মেশিন কেন নষ্ট থাকে?

উত্তরপত্রে ‘মাসুদ ভালো হয়ে যাও’

হাত হারিয়েও সফল পৌলোমী

বাবা দিবস আজ

সর্বশেষ খবর

স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার নারী দিবস উদযাপন

শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করলেন মোস্তাফিজুর রহমান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইউল্যাব’ শিক্ষার্থীদের ফটোওয়াক

ভান্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়ায় পৌর প্রশাসক নিয়োগ