স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার ক্রমশ একাকিত্ব, অবসাদ ও উদ্বেগের জন্ম দেয়, এমনটাই জানিয়েছে ‘নিউরোরেগুলেশন’ নামে এক বিজ্ঞান-পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রে। মাদকের মতোই সর্বনাশা স্মার্টফোনের আসক্তি।
গবেষকদের জোর দিয়ে বলেছেন, যোগাযোগ অটুট রাখতে স্মার্টফোনের ব্যবহার আজকের যুগে এড়ানো যায় না। কিন্তু এর অবিরাম সঙ্কেতবার্তা এবং ভাইব্রেশনের প্রতি আকর্ষণ বেড়েই চলে ব্যবহারকারীদের। মদের আসক্তির মতোই নতুন ই-মেল, টেক্সট মেসেজ বা ছবির আগমনবার্তার আবেদনকে এড়িয়ে চলা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে।
সান ফ্রানসিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক এরিক পেপার জানিয়েছেন, স্মার্টফোনের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষকে ধীরে ধীরে প্রভাবিত করতে শুরু করে, যা নেশার জন্ম দেয়। এই নেশারকে তুলনা করা যেতে পারে অক্সিকনটিন জাতীয় পেনকিলারের সাথে যা সেবনে আফিম সেবনের মত প্রভাব সৃষ্টি করে এবং তা সাধারণত: ব্যথার উপশমের জন্য ব্যবহার করা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় কাটালেও একই ভাবে তা একাকিত্বের জন্ম দেয়, সামাজিকতা নষ্ট করে।
এ ব্যাপারে ১৩৬ জন ছাত্রছাত্রীর ওপর সমীক্ষা চালানো হয়। দেখা গেছে, এদের মধ্যে যারা ফোন অতিরিক্ত ব্যবহার করে, তারাই একাকিত্ব, উদ্বেগ আর অবসাদের কথা বার বার বলেছে।
গবেষকদের ধারণা, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া টেকনোলজির যুগে মুখোমুখি কথাবার্তা, সামাজিক যোগাযোগ কমে যাওয়ার কারণেই একাকিত্ব বাড়ছে। এই ছাত্রছাত্রীরা আবার এক সঙ্গে অনেক কাজ করে। পড়ার সঙ্গে টিভি দেখে বা ফোনের পর্দায় চোখ রাখে, ক্লাস করে, এমন কি খাওয়াদাওয়া পর্যন্ত করে। এত কাজ এক সঙ্গে করতে গেলে শরীর ও মনকে বিশ্রাম দেওয়া হয় না পুরোপুরি। শরীরে যথেষ্ট শক্তি সঞ্চয় হয় না। তা ছাড়া এত কাজ একই সময়ে করতে গেলে কোনও কাজই ঠিক ভাবে হয় না।
তবে এই ডিজিটাল আকর্ষণ আমাদের গলতি নয়, বলছেন গবেষকেরা। তাদের দাবি, কর্পোরেট মুনাফার উদ্দেশ্যে প্রযুক্তি সংস্থাগুলিই নেশাচ্ছন্ন করে গ্রাহকদের। গবেষকদের মতে, বাঘ বা অন্যান্য হিংস্র প্রাণীর উপস্থিতি টের পেলে বা বিপদে পড়লে মানুষ যেভাবে সতর্ক হয়, একই প্রভাব সৃষ্টি করে স্মার্টফোনের অ্যালার্ট সাউন্ড, পুশ নোটিফিকেশন বা ভাইব্রেশন।
তবে এই আকর্ষণ স্বেচ্ছায় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলেই মনে করেন গবেষকেরা।
ঠিক যেভাবে আমরা অতিরিক্ত চিনি বা নুন খাওয়ার অভ্যেস কমিয়ে থাকি, সেভাবেই। সেজন্য অবশ্য ব্যবহারকারীদের বুঝতে হবে, প্রযুক্তি সংস্থাগুলি আমাদের মানসিকতাকে লাভের অঙ্কে মাপছে।
গবেষক এরিক পেপারের দাবি, নোটিফিকেশনের আওয়াজ বন্ধ রেখে, শুধুমাত্র মেল পড়ে, বিশেষ একটি সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লগ-ইন করে ব্যবহারকারীরাই একমাত্র পারেন স্মার্টফোন ও কম্পিউটারের হাতছানি সামাল দিতে।