প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন করার মতো সক্ষমতা এই মুহূর্তে তাদের নেই।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আগারগঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচির প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি।
গেল শনিবার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে ইভিএম ব্যবহারের কথা জানান। তবে ইসি সূত্রে জানা গেছে সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের সক্ষমতা রয়েছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটির।
ইসি সূত্র বলছে, বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের কাছে এক লাখ ৫২ হাজার ৫৩৫টি ইভিএম রয়েছে। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে ২০ শতাংশ মেশিন অকেজো হয়ে পড়েছে। এই স্বল্প সংখ্যক ইভিএমে সর্বোচ্চ ১০০ আসনে ভোটগ্রহণ করা সম্ভব। ৩০০ আসনে ভোট গ্রহণে নির্বাচন কমিশনকে অন্তত আরও দুই লাখ নতুন ইভিএম কিনতে হবে।
সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর জানান, ‘আমাদের এখন যে ইভিএম আছে তাতে সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১৩০ আসনে ভালোভাবে ভোট করতে পারব। এর চেয়ে বেশি আসনে ইভিএমে ভোট করা সম্ভব না।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। কারণ আমরা কয়েক দিন আগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব নিয়েছি। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এবং ইউপি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছি। জাতীয় নির্বাচন অনেক দূরে। ফলে এ বিষয়ে (ইভিএম) এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংলাপে ইভিএমের পক্ষে-বিপক্ষে অনেকেই মতামত দিয়েছেন। আমরা এগুলো পর্যালোচনা করছি। পাশের দেশ ভারতে সম্পূর্ণ নির্বাচন ইভিএমে হয়। তারা কীভাবে সফল হলো? তারা নিশ্চয় একটা সিস্টেমে মাধ্যমে সফল হয়েছে। সেগুলোই আমরা স্টাডি করছি।’ ইসির ইভিএম ভারতের ইভিএমের চেয়ে অনেক আপডেটেড এবং মানের দিকেও অনেক উন্নত বলে মনে করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের দলীয় সভায় ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইভিএম নিয়ে তারা কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেবে। তবে এখনো আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো ফরমাল বা ইনফরমাল প্রস্তাব আসেনি। তারা প্রস্তাব দিলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কমিশন নিবে। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রস্তাব আসার কোনো সুযোগ নেই। সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, ইভিএমে যদি আস্থার জায়গা ঠিক হয়ে যায়, তাহলে ১০০ বা ২০০ অথবা ২৫০ আসনে ভোট করা সম্ভব। ৩০০ আসনেই যে করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা তৈরি হলেই আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব।
নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা শাখা সূত্রে জানা গেছে, বিগত নির্বাচন কমিশন যে দেড় লাখ ইভিএম কিনেছে সেই প্রকল্প শেষ হবে আগামী বছরের জুনে। ইভিএম কেনার নতুন কোনো প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির কোনো কার্যক্রম নেই ইসির। আগামী বছরের ডিসেম্বর বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট হতে পারে।