রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে তিন বাসের রেষারেষিতে শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় চতুর্থ দিনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। অচল করে দিয়েছে রাজধানী।
বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর ফার্মগেট, উত্তরা, সাইন্সল্যাবরেটরি মোড়, মতিঝিল, রামপুরাসহ রাজধানীর সব এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভারের পূর্বপাশেও অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে ছাত্ররা।
সকাল ১০টার পর পরই ফার্মগেট মোড়ে ২ পাশের সড়কেই অবস্থান নিয়েছে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও আশে-পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
এদিকে, ১০টার পর উত্তরা হাউজ বিল্ডিং মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ঢাকা-আবদুল্লাহপুর গাজীপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।
ট্রাফিক উত্তর বিভাগের ডিসি প্রবীর কুমার রায় জানান, শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ায় বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে।
কদমতলী থানার ওসি আবদুল জলিল জানান, কদমতলী-কুতুবখালী হানিফ ফ্লাইওভারের মুখে ধনিয়া কলেজের ছাত্ররাসহ আরও কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে। পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
মাতুয়াইল মেডিকেল-এর সামনের সড়ক অবরোধ করেছেন শামসুল হক খান, রফিকুল ইসলাম ও মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাস্তায় গাড়ি কম থাকায় সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দ্রুত তাদের ৯ দফার বাস্তবায়ন চায়। তাদের দাবিগুলো হলো-
১. বেপোরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই বিধান সংবিধানে সংযোজন করতে হবে।
২. নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর গতকালের বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
৩. ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন না।
৪. বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না।
৫. শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬. প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকাতে স্প্রিড ব্রেকার দিতে হবে।
৭. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভর সরকারকে নিতে হবে।
৮. শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে, থামিয়ে তাদেরকে নিতে হবে।
৯. শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
এদিকে, রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করছে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গাজীপুরের টঙ্গী ও চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে তারা। এতে এসব সড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়।
সকাল থেকে টঙ্গীর কলেজ গেট, কোণাবাড়ি ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিক্ষোভে নামে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শত শত শিক্ষার্থী। বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে তারা। একপর্যায়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে দুই মহাসড়কেই যান চলাচল থেমে গেলে, দেখা দেয় তীব্র যানজট।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ময়মনসিংহেও রাস্তায় নেমে আসে শিক্ষার্থীরা। এসময় নতুন বাজার, গাঙ্গিনাপাড় এবং পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় বেশ কয়েকটি অটোরিক্সা ও প্রাইভেটকার ভাঙচুর করা হয়। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে নগরীর বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। নেত্রকোণার মোক্তারপাড়া এলাকায় পৌর ভবনের সামনের সড়কে সকাল এগারোটায় শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন করে। ঢাকায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয় মানববন্ধনে।
প্রসঙ্গত, গতরোববার দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ওরফে সজীব এবং একই কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মিম মারা যায়। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। পথচারীরা সঙ্গে সঙ্গে আহতদের নিকটস্থ কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে গুরুতর আহত কয়েকজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।