আজ বাইশে শ্রাবণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৩তম প্রয়াণ দিবস। বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখাই সমৃদ্ধ হয়েছে রবীন্দ্র-প্রতিভায়। তাঁর গান এক অমূল্য ভাবসম্পদ। ৮০ বছরের জীবনে কবিগুরু শুধু সাহিত্য-সংস্কৃতি নয়, রাজনীতি ও সমাজনীতি সব ক্ষেত্রেই দ্যুতি ছড়িয়েছেন। সেই সঙ্গে পূর্ব-পশ্চিমের সেতুবন্ধনের প্রধান পুরোধাও তিনি। আনন্দ-বেদনা, প্রেম-দ্রোহের অসামান্য সব সৃষ্টির মাঝে তিনি বেঁচে আছেন থাকবেন অনন্তকাল।
২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ। জনসমুদ্র উত্তাল করে চলে যায় কবিগুরুর শবযাত্রা। শেষ বয়সের অসুস্থতায় তার স্থান হয়েছিল অস্ত্রোপচারের টেবিলে। কিন্তু তিন দিনের মধ্যে ইনফেকশন সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ায় আর জ্ঞান ফেরেনি বাঙালির চিরপথের সাথী রবীন্দ্রনাথের।
রবীন্দ্র-প্রতিভার সূচনার কালটা কলকাতায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ সেই আভিজাত্যের মধ্যেই তাঁর জন্ম। কর্মদ্যোগ সৃষ্টি করেছে একটি কালের, একটি সংস্কৃতির -- যেখানে এই পূর্ববঙ্গ, বাংলাদেশের পরিসর খুব বড়। কবিতা, কাব্য ছাড়াও, গল্প-উপন্যাস-নাটক লিখেছেন বিস্তর। ৭০ বছর বয়সে আঁকতে শুরু করেন ছবি, আর জীবনের প্রায় পুরোটাই লিখেছেন বিভিন্ন স্বাদের ও ভাবের দুই সহস্রাধিক গান।
১৯১৩ সালে সাহিত্যে পান নোবেল পুরস্কার। তাঁর আগে কোনো বাঙালি তো বটেই, কোনো এশীয়-ই এই পুরস্কার পাননি। বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত তারই রচনা থেকে নেওয়া।
বাঙালির যে মনন ও সৃজনশীলতা- তার বীজ রোপিত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের হাতেই। সেই বীজ উপড়ে ফেলার মধ্য দিয়ে বাঙালিকে আত্মপরিচয়হীন জাতিতে পরিণত করতে চেয়েছিল পাকিস্তানিরা। ১৯৭১ সেই ষড়যন্ত্রের সমুচিত জবাব দেয় বাঙালিরা।
তাই কাল নিরবধিতে তিনি বাংলা ও বাঙালির সমার্থক পথের দিশা।