বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারকাজ চালানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার অস্থায়ী ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান এ আদেশ দেন।
অসুস্থতার কারণে এ মামলায় গত সাত মাসে আদালতে হাজির হননি বিএনপি চেয়ারপারসন।
এরইমধ্যে কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে অস্থায়ী আদালত বসানো হয়।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন আদালতে হাজির হতে ‘অনিচ্ছা’ প্রকাশ করেন। ওইদিন তার অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে কি-না, এ বিষয়ে আদেশের জন্য ২০ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করে আদালত।
১২ সেপ্টম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন কারাগারের ভেতরে বসানো আদালতে হাজির হতে ‘অনিচ্ছা প্রকাশ করেন— জানিয়ে বিচারক আসামিপক্ষের আইনজীবীদের কাছে জানতে চান, এ অবস্থায় প্রধান আসামির অনুপস্থিতিতেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার চলতে পারে কি না।
এদিন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করেন।
এ সময় তারা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন ছাড়া এভাবে কারাগারের ভেতরে একজন বন্দির বিচারের ব্যবস্থা করা সংবিধান ও আইন পরিপন্থি। এ মামলায় খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিনেরও আবেদন করেন তার আইনজীবী।
এর আগে গত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, এখানে ন্যায়বিচার নেই— যা ইচ্ছে তাই সাজা দিতে পারেন, যত ইচ্ছে সাজা দিতে পারেন আমি অসুস্থ বারবার আদালতে আসতে পারব না।
বুধবার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা বিচারকাজ শুরু হওয়ার পর এ কথা বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, এভাবে বসে থাকলে আমার পা ফুলে যাবে— আমার সিনিয়র কোনো আইনজীবী আসেনি এটা জানলে আমি আসতাম না।
আদালত থেকে যাওয়ার সময় খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমার কোনো সিনিয়র আইনজীবী আদালতে ছিল না। তাদের যথাযথভাবে নোটিশ দেয়া হয়নি। যে প্রজ্ঞাপন গত রাতে করা হয়েছে, তা সাত দিন আগে কেন হয়নি। আদালতকে জানিয়েছি, আমি অসুস্থ, বারবার আসতে পারব না।
এ আদালতের বিচারককাজ পরিচালনা করেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান।
খালেদা জিয়াকে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আদালতে হাজির করা হয়। হুইলচেয়ার বসিয়ে তাকে আনা হয়। পরনে ছিল বেগুনি রঙের শাড়ি। চেয়ারে বসা অবস্থায় তার পায়ের ওপরের অংশ থেকে নিচ পর্যন্ত সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা ছিল।
এ আদালতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপিপন্থী ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তাফা খান।
এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন।
পরে তিনি আদালতের অনুমতি নিয়ে বলেন, ‘আমি এখানে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে এসেছি। খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনা করেন—এমন কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হননি। রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী কারাগারে আদালত বসবেন—এ ধরনের প্রজ্ঞাপন গত রাতে আসামিপক্ষের এক আইনজীবীর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
এটা যথাযথভাবে আসামিপক্ষকে জানানো হয়নি। তাই আদালতকে সার্বিক বিবেচনায় নতুন তারিখ ধার্য করতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সাজা হয়।
অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়াকে এখন পর্যন্ত আদালতে হাজির করা যায়নি— তার অসুস্থতা ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কারাগারে আদালত বসানোর বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় বলে জানান দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
প্রজ্ঞাপনটি যথাযথভাবে আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়াকে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আর অন্য আইনজীবীদের ব্যক্তিগতভাবে আজকের শুনানির বিষয়ে জানানো হয়েছে। এমনকি বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা-সংলগ্ন অস্থায়ী আদালত যেখানে বসত সেখানেও তা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি আদালতের কার্যক্রম শুরুর আরজি জানান।
শুনানি শেষে বিচারক মো. আখতারুজ্জামান আসামিদের জামিন ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহাল রেখে সেই দুদিন পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।